টাকার কাছে হেরে গেলো স্বপ্ন! গরীব হয়ে জন্মানোটা কি অপরাধ? ব্যবসায়ী সাকিবে চূর্ণবিচূর্ণ হাজারো স্বপ্ন। তবে এই ছিলো সাকিবের মনে? গরীব বলে কি ক্রিকেটার হবার স্বপ্ন দেখা যাবেনা? প্রতিভার তবে কি কোনো মূল্য নেই? ব্যবসায়ী সাকিবে বলি হলো প্রতিভা। গরীবের পেটে লাথি তো সবাই মারে। সাকিবের একাডেমীটাও তবে ব্যবসার উদ্দেশ্যেই??
দু'দিন হলো লেখাগুলো নিউজফিডে অনেকটা প্রভাব বিস্তার করেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। যার সূত্রপাত সাকিব আল হাসানের নির্দেশনায় পরিচালিত সদ্য ভূমিষ্ট “মাস্কো সাকিব ক্রিকেট একাডেমী„ -র নির্ধারিত ভর্তি ফি ও মাসিক বেতনকে কেন্দ্র করে। আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত আন্তর্জাতিক মানের এই একাডেমীতে ভর্তি হতে আপনাকে গুনতে হবে ২৫ হাজার টাকা। আর মাসিক বেতন হবে ১০ হাজার টাকা। তবে আবাসিক থাকতে হলে তবে তা বেড়ে দাড়াবে ২৫ হাজার টাকায়। আর একাডেমীর এই মোটা অংকের চাহিদাতেই মুলতঃ উপরে উল্লেখিত আক্রমনাত্মক বাক্যগুলো ব্যবহার হচ্ছে।
শুধুই কি তাই? পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জাতির চিন্তাশীল মেধাবী ভাই/বোনগণ ঘুম ভেঙে জাগতে শুরু করেছে। এই মোটা অংকের ফি এর বিরুদ্ধে তারা নিজেদের মেধাকে ব্যবহার করছে, ব্যবহার করছে মানুষের আবেগও। প্রশ্ন তুলছে এতো ফি এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে, প্রশ্ন তুলছে সাকিবের মানসিকতা নিয়ে। বলছে সাকিব টাকার লোভে পড়েছে...
তাদের অনেকের বক্তব্যটা এমন যে, তার ভাই, ভাতিজা বা পাড়া-মহল্লার অনেকেই সাকিবের একাডেমীতে ভর্তি হবার স্বপ্ন দেখেছিলো। কিন্তু টাকার কাছে তাদের ইচ্ছে হেরে গেলো... ইত্যাদি ইত্যাদি।
এমন ক্ষেত্রে পরামর্শ ও উত্তর-
১/ দেশে কি ক্রিকেট শিক্ষা একাডেমী বা ক্লাবের অভাব আছে? হয়তো সাকিবেরটার মতো উন্নত মানের নেই, কিন্তু আছে তো। সেগুলো থেকে কি ক্রিকেটার তৈরী হচ্ছেনা? প্রতিভার বিকাশ হচ্ছেনা? হালের ক্রিকেটাররা কি তবে উড়ে এসে জুড়ে বসেছে, নাকি তাদের অনলাইনে অর্ডার দিয়ে এনেছেন?
২/ সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য তো বিসিবি আছেই। তাদের বয়স ভিত্তিক প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচীতে অংশ নিয়েও তো আপনার সেই আত্মীয় বা ভাই বন্ধু তার প্রতিভার জানান দিতে পারে। তাছাড়া বিকেএসপি তো আছেই।
৩/ আপনার ভাই বন্ধু বা আত্মীয়কে কেনইবা সাকিবের একাডেমীতেই ভর্তি হতে হবে? আর কোথাও কি ক্রিকেট শেখায়না? তাছাড়া, সাকিবের একাডেমীতে পড়লেই যে আপনার প্রিয় প্রতিভা যে প্রস্ফুটিত হবেই তারই বা নিশ্চয়তা কি?
৪/ এখন বলি আসল কথা। আপনার প্রিয় জন বা বন্ধু ভাইকে সাকিবের একাডেমীতে ভর্তি করতে পারছেন না সাকিবের ব্যবসায়ী মনোভাবের কারণে? তবে তো একটা কাজ করাই যায়, সাকিবকে আচ্ছামত বকুন। নিষ্ঠুর সাকিব, মনে একটুও দয়া নেই। তবে আমি জানি আপনার বা আপনাদের মনে অনেক দয়া। সুতরাং... আপনার একার সক্ষমতা থাকলে, বা কয়েকজন মিলে আপনার দেখা প্রতিভার পেছনে খরচ করতেই পারেন। সাকিব তো পারেনি খরচ কমিয়ে তাকে সাহায্য করতে, কিন্তু আপনি তো পারেন খরচের ব্যবস্থা করে তাকে সহায়তা দিতে। দেশের ক্রিকেটের স্বার্থে কাজ করা শুধু সাকিবের একার কাজ না, সেটা তো আমার আপনার সবার। সে যদি প্রস্ফুটিত হয় তবে তো আপনারই সুনাম। সাকিব একা এতো সুনাম দিয়ে কি করবে?
৫/ মাস্কো সাকিব একাডেমীটা সাকিবের একার নয়। একটা গ্রুপ এখানে বিনিয়োগ করেছে। বিনিয়োগকারী গ্রুপ কি লাভ ছাড়াই এতো টাকা খরচ করে যাবে? আপনার টাকার মূল্য আছে, সাকিবদের টাকার মূল্য নেই? খানিকটা লাভ তো থাকবেই। অন্তত একাডেমীর নিজের খরচটা তো একাডেমীকেই বহন করতে হবে।
৬/ একাডেমীর ইনডোর ও আউটডোরে রাত দিন অনুশীলন করা যাবে সেখানে। কৃত্রিম আলোয় অনুশীলন করতে শক্তিশালী ফ্লাডলাইটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ইনডোরের বোলিং মেশিন আসছে ইংল্যান্ড থেকে। এছাড়া শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। দুইটি ড্রেসিংরুম, ওয়াকিং এরিয়াসহ বিশ্রামাগার, জিমনেশিয়াম ও ক্যাফেটেরিয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। (বিঃদ্রঃ টাকার অভাবে কিন্তু বাফুফে এখনো একটা জিমনেসিয়াম চালু করতে পারেনি)। আগামী মাসের কারেন্ট বিলটা আপনি দিয়েন, কেমন?
৭/ ১৬ বিঘা জমির উপর তৈরি করা হয়েছে সাকিবের একাডেমি। ১২ হাজার স্কয়ার ফুটের জায়গায় রয়েছে অনুশীলনের সুযোগ সুবিধা। সেন্টার উইকেটে উইকেট আছে ছয়টি। এছাড়া ইনডোর ও আউটডোর মিলে পুরো একাডেমিতে উইকেট আছে ১৯টি। এগুলো সবের পরিচর্যা কে করবে? নিশ্চয়ই লোক রাখতে হবে। তো সেই লোকের বেতন কে দিবে? এতোগুলো কোচদের বেতনও কি সাকিব নিজের পকেট থেকে দিবে?
৮/ সাকিবের টাকা আছে। কিন্তু সবই পরিশ্রমের টাকা। দিন রাত মেহনতের টাকা। ১৬ কোটি মানুষের দায়িত্ব মাথায় নিয়ে পথ চলার টাকা। (আবার বলে বইসেন না এগুলো আমার আপনার টেক্সের টাকা)। আপনিও পরিশ্রম করে টাকা কামান, সাকিবও তাই। সুতরাং হিসাবটা বরাবর রাখুন...
যাহোক, এতোক্ষণে নিশ্চয় বুঝতে পারছেন মাস্ক সাকিব একাডেমীটা অন্য দশটা সাধারণ একাডেমীর মতো সাধারণ নয়। এইটা একটা আন্তর্জাতিক একাডেমী। যাতে সর্ব প্রকার সুযোগ সুবিধা বিদ্যমান। সুতরাং তাই খরচটাও একটু বেশী। তাছাড়া প্রতিভার অন্বেষণ পেলে কেউ কি কখনো ছেড়ে দেয়? সুতরাং ঘাবড়ানোর কিছু নাই। আপনার ভাই বন্ধুকে ভালো করে খেলতে বলেন, সুযোগ হবেই আশাকরি। তার থেকে বড় কথা হলো, এই প্রজেক্টের মূল লক্ষ্য হলো ফর্মহীনদের হারাতে না দেওয়া। জাতীয় দল থেকে বাদ পড়া কেউ যেন নিজেকে ফিরে পেতে পারে তার সহায়তা করা। কোচ সালাউদ্দীন নিজেও তা বলেছেন। কোথায় উচ্ছ্বসিত হবে, গর্বিত হবে, ধন্যবাদ জ্ঞাপন করবে, সেখানে কিনা এসব অবান্তর প্রশ্ন তুলে নিজের মেধার প্রমাণ রাখছে। কিছু মনে করার নেই। আমরাও কিছু মনে করিনি। কারণ, আমরা জানি বাঙালী একটু কামড়াতেই বেশী পছন্দ করে। কারো দ্বারা উন্নতিতে একটু হিংসে না হয়ে পারে?
©ফেবু পোস্ট
0 মন্তব্যসমূহ